পার্ট-০১
১। আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি এবং দুর্বলতা কী?
এটি
সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত ইন্টারভিউ কোশ্চেনগুলোর একটি এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিংও বটে। প্রশ্নের প্রথম অংশটির উত্তর দেয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও পরের অংশটি জীবন্ত ল্যান্ডমাইন, যদি না আপনি সতর্ক
হন। কোম্পানি সাধারণত এমন কাউকে খোঁজে যারা তিনটি কাজ ভালভাবে করতে পারে।
১।
আয় বাড়ানো
২।
টাকা বাঁচানো
৩।
সময় বাঁচানো
দুর্বলতার
প্রশ্নটির উত্তর দেবার সময় আপনার বৈশিষ্ট্যগত ত্রুটির কথা পরিহার করুন। দুর্বলতাটি আপনার দক্ষতা রিলেটেড হলে ভালো হয়। যেমন উত্তরটি এমন হতে পারে- “আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন আমার পাওয়ার পয়েন্ট এ দক্ষতা ছিল
না। কিন্তু একটি ভালো বইয়ের সাহায্য নিয়ে আমি আমার দুর্বলতাটি দূর করতে পেরেছি।”
আরেকটি
ভালো আইডিয়া হচ্ছে দূর্বলতার ছদ্মবেশে নিজের শক্তির দিকটাই তুলে ধরা। যেমন- “আমি আমার কাজ সম্পর্কে প্যাশনেট এবং যেকোন কাজে আমি নিজের সম্পূর্ণ্টাই দেই। তো মাঝে মধ্যে
আমি যখন অন্যদের অলস সময় কাটাতে দেখি, তখন হতাশ হই”।
২। কিসের তাড়না আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখে?
এটি
আরেকটি ল্যান্ডমাইন যেখানে আপনাকে সাবধানে পা রাখতে হবে।
এতি আপনার দুর্বলতা খোঁজার আরেকটি উপায়। আপনি যতই আপনার প্রশ্নকারীর সাথে কথা বলতে বলতে সহজ হয়ে যাবেন, খুব ভালো সম্ভাবনা আছে আপনি অসাবধান হয়ে পড়বেন। খেয়াল রাখুন। এর উত্তরটি হতে
পারে, “মাঝেমধ্যে ইন্টারভিউ সম্পর্কিত দুঃস্বপ্ন ছাড়া খুব কম সময়ই আমার
ঘুমোতে কস্ট হয়।আমি সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট এ বিশ্বাস করি
এবং পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিজেকে রিচার্জ করে নিই। আমি জানি আমি ক্লান্ত থাকলে হত কাজে আমার
শতভাগ দিতে পারব না।
৩। আপনার আগের কোম্পানিতে আপনি কীভাবে উন্নতি করেছিলেন?
ভালো
প্রশ্ন যদি প্রশ্নকর্তা একজন প্রোমোটেবল ক্যান্ডিডেট খুঁজে থাকেন। এখানে আপনি বিচ্ছিন্নভাবে আপনার পার্সোনাল এবং বিজনেস ট্রেইটগুলো তুলে ধরতে পারেন। আপনার আগের কোম্পানির প্রশংসা করুন। যেমন- “ট্রেনিং টি শিক্ষণীয় ছিল”
কিংবা “আমি বেশ কিছু অসাধারণ মেন্টর পেয়েছিলাম যারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন।” ধাপে ধাপে টাইটেল ধরে আপনার কঠোর পরিশ্রমের এবং মেধার ফসল হিসেবেই যে প্রমোশনগুলো পেয়েছেন
তা কথায় কথায় তুলে ধরুন। প্রমোশন যদি নাও পেয়ে থাকেন, আগের চাকরিতে কী কী বাধার
সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং কীভাবে সেগুলো অতিক্রম করেছেন তার গল্প করুন।
৪। যদি আপনি রঙ হতেন, কোন রঙ হতেন?
আমাকে
একবার বেশ ভালো একটি প্রতিষ্ঠান এর ইন্টারভিউতে এই
প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আমি হেসে গর্বিতভাবে রংধনুর রঙ বলে উত্তর
দিয়েছিলাম। প্রত্যেকের মধ্যে সাধারণত চার ধরনের বেসিক পার্সোনালিটি টাইপের যেকোন একটি দেখা যায়। কিন্তু আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী চিনতে এবং মানিয়ে নিতে পারি। কখনো আমার লাল হবার প্রয়োজন হয়, কখনওবা সবুজ, মাঝেমধ্যে সাদা কিংবা কালো এমনকি গোলাপিও। প্রশ্নকর্তা হেসে ফেলেছিলেন এবং বলেছিলেন “খুব ভালো উত্তর”।
৫। আপনি
কতদিন আমাদের কোম্পানির সাথে থাকতে চান?
এটি
একটি ভালো প্রশ্ন। এর মানে হচ্ছে
প্রশ্নকর্তা আপনাকে জবটি দেবার কথা ভাবছেন। কিন্তু এটি ট্রিকি হতে পারে। আপনি ভাবতে পারেন প্রশ্নকর্তা ভাবছেন আপনি অল্পসময় পরই চলে যাবেন কিনা। টোপটি
গিলবেন না। বল প্রশ্নকর্তার কোর্টে
ফেরত পাঠান এভাবে উত্তর দিয়ে, “আমি এই কোম্পানিতে খুব
ভাল ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আমি পথনির্দেশনায় ভালো সাড়া দেই এবং সবসময়ই নতুন কিছু শিখতে চাই। আমি সাফল্য বলতে বোঝাই নতুন সুযোগ এলে তার জন্যে প্রস্তুত থাকা। আপনার কি মনে হয়
কতদিন আমি এখানে সে চ্যালেঞ্জ এর
সম্মুখীন হব?”
৬।
আপনি কীভাবে মেজর প্রজেক্ট এর কাজগুলো করেন?
আপনি
যে একজন সফল বিজনেস ম্যানেজার যে কিনা সমস্যা
আইডেন্টিফাই এবং সলভ করতে পারেন তা দেখানোর এটি
সুবর্ণ সুযোগ। “আমি কার্যকর স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং এ বিশ্বাসী যা
সম্মুখী (অন্য কথায় আমার কী কী রিসোর্স
এর প্রয়োজন হবে?) এবং পশ্চাদমুখী চিন্তা (যেমন, যদি ডেডলাইন শেষ এর দিকে থাকে
তাহলে সফল আউটকাম পেতে হলে কোন কোন সময়ে কী কী পদক্ষেপ
নিতে হবে?) দুটোর সমন্বয়েই গঠিত।
৭। আপনি কীভাবে স্ট্রেস সামলান?
এটির
উত্তর দেয়ার সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে প্রতিহত করা।“ আমি সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্ট্রেস পরিহার করি। প্রত্যেকটা দিনে অনেকগুলো করে ঘন্টা আছে। আমি কার্যকর লক্ষ্য নির্ধারণ করার মাধ্যমে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করি। আমি ব্যায়াম করি, ঠিকমত খাই, এবং পর্যাপ্ত ঘুমাই। আমার মনে হয় এতেই স্ট্রেস
দূরীভূত হয়।
৮। আপনার চাকরির প্রথম ৯০ দিনে আপনি কী করবেন?
এটি
প্রশ্নকর্তার দৃস্টিতে ফেয়ার প্রশ্ন হলেও চাকরিপ্রার্থীর জন্যে আনফেয়ার। আপনি সাধারণভাবে এই প্রশ্নের উত্তর
দিতে পারেন যে, “আমি কোম্পানির নিকটবর্তী লক্ষ্যের সাথে মিলিয়ে আমার লক্ষ্য সেট করব। তারপর আমি আমার সময় সেই লক্ষ্যগুল অর্জনের জন্যে ব্যয় করব। আপনাদের কোম্পানির জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এখন কী এবং আপনারা
কি কোন ট্রেনিং প্রোগ্রাম অফার করেন?”
পার্ট-০২
১। আপনার বর্তমান চাকরীর কি পছন্দ বা অপছন্দ করেন?
এই
প্রশ্নটি করে প্রশ্নকর্তা কিছুটা সংকুচিত হয়ে যেতে পারেন এই ভেবে যে
আপনি না বোধক উত্তর
দিয়ে তার ফাঁদে পা দিচ্ছেন কিনা
। তিনি আপনার কাছে পজিটিভ উত্তর-ই চাচ্ছেন। যদি
আপনার বর্তমান কোম্পানি টর্চার চেম্বার ও হয় তবুও
তাকে তা বলবেন না।
এভাবে উত্তর দিতে পারেন , “আমি আসলে চাকরি খুঁজছিলাম না এবং বর্তমান
চাকরিতে আমি খুব ভালো করছি। আমি সেখানকার ট্রেনিং এবং সংস্কৃতি খুব পছন্দ করি। আমাদের পণ্য এবং সার্ভিস অসাধারণ। আমার
বস অনেক সাপোর্টিভ এবং ভালো শিক্ষক। কিন্তু কোম্পানিটি ছোট এবং আমার বিকাশের সুযোগ কম”। ( আপনার আগের কোম্পানি বড় হলে বলতে
পারেন “আমি একটি ছোট কোম্পানি খুজছি, যেখানে
আমি বড় পার্থক্য এনে
দিতে পারব”।
২। আপনার কাজের কোন অংশটি আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
ইন্টারভিউ
এর প্রেসারে কিংবা আগের জব এ খারাপ
অভিজ্ঞতার কারণে অনেক ক্যান্ডিডেটই ভাবেন তাদের কাজ গুরুত্বপূর্ন ছিল না কিংবা তাড়াহুড়ো
করে অপ্রয়োজনীয় দক্ষতার কথা বলে ফেলেন। সাবধান থাকুন। আপনার সামগ্রিক ইমেজ এর কথা মাথায়
রেখে আপনার চরিত্রের পজিটিভ দিক গুলো তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, আপনি এমন একজন বিজনেস ম্যানেজার এর ইমেজ তৈরি
করতে চান যে সুনিপুণভাবে বিজনেস
চালাতে সক্ষম। উত্তরটি এভাবে চেস্টা করে দেখতে পারেন, “আমার বুদ্ধিদীপ্তভাবে সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা। আমি প্রতিদিন গুরুত্বের ক্রমানুযায়ী কিছু গোল সেট করি। এবং সেগুলো পূরন না হওয়া পর্যন্ত
সব অনুকূলতা এড়িয়ে কাজটি শেষ করার প্রচেষ্টায় থাকি”। সেই সাথে আপনার কিছু ইম্প্রেসিভ এচিভমেন্ট
এর কথা তুলে ধরতে প্রস্তুত থাকুন।
৩।ওভারটাইম কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার মনোভাব কি?
আপনার
যদি অসুস্থ বাবা-মা থাকেন কিংবা
অন্য যেকোন কারণে আপনি যদি ওভারটাইম করতে অনিচ্ছুক হন, তবে প্রশ্নকর্তাকে বলার সময় এটি নয়। সবচেয়ে ভালো উত্তর হল- “যদিও আমি টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং গুরুত্বপূর্ন কাজে প্রাধান্য দেয়ায় বিশ্বাসী, আমি মনে করি মাঝেমধ্যে বাড়তি সময় এর প্রয়োজন হতে
পারে।
৪। আপনার নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে কিছু বলুন।
এক্ষেত্রে
আপনি যে মানুষকে বোঝাতে,তাদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পেতে ,এবং যেকোন ডিসিশন নেবার পর যথার্থ অ্যাকশান
নিতে সমর্থ সেটা তাদের বোঝান। আপনার বর্ণনাতে “মানুষকে প্রভাবিত করতে পারা,উদ্বুব্ধ করতে পারা, নেতৃত্ব দেয়া, অন্যদের ক্ষমতাশালী করতে পারা, নেগোশিয়েট করতে পারা, পজিটিভ পদক্ষেপ নেয়া, সুযোগ এর সৃষ্টি করা”
এই জিনিসগুলো তুলে ধরতে পারেন।
৫।আপনি কিভাবে মেধার পরিচালনা করেন এবং বিকশিত হবার সুযোগ করে দেন?
এটা
হল আপনি কিভাবে অন্যদের ম্যানেজ করেন তা জিজ্ঞেস করার
আরেকটি পন্থা। আপনি বলুন আপনার অধঃতন যারা আছেন তাদের সাথে নিজে অন্যদের কাছে যেমন ব্যবহার আশা করেন তেমন ব্যবহার ই করেন। আপনি
আপনার পরিচালনায় পজিটিভ ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়া এবং সময়মত ফলাফল পেতে পছন্দ করেন। শেখানোর জন্যে আপনি যে সবসময় ই
আগ্রহী সেটা তুলে ধরুন। শেষ করুন এমন কারো উদাহরণ দিয়ে যাকে আপনি চাকরি দিয়েছেন,ট্রেইন করেছেন এবং পরে সে পদোন্নতি পেয়েছে।
৬। আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কি?
এখানে
প্রশ্নকর্তা কি বিজনেস লাইফ
নাকি পার্সোনাল লাইফ বোঝাচ্ছেন? জিজ্ঞেস করুন। যদি বিজনেস হয় তাহলে বেশ।
আপনার মেজর প্রমোশন যা আপনার কঠোর
পরিশ্রম এবং ডেডিকেশন এর ফলে এসেছে
সেটির কথা তুলে ধরুন। যদি পার্সোনাল এবং বিজনেস লাইফ দুটোর কথাই বলা হয় তাহলে বিজনেস
লাইফ ই বেছে নিন।
মনে রাখবেন, আপনি একটি প্রফেশনাল ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। আপনার বাচ্চার জন্ম আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন সেটা
অবশ্যই সত্যি,কিন্তু এই ক্ষেত্রে তার
উল্লেখ করবেন না।
৭। এই কলমটি আমার কাছে বিক্রি করুন।
এটি
এন্ট্রি লেভেল এর সেলস ইন্টারভিউ
এর সবচেয়ে কমন প্রশ্নের একটি। এটি আপনার অন্য একজন মানুষ এর মনকে উন্মুক্ত
করার, তাকে রাজি করানোর ক্ষমতাকে যাচাই করে। প্রশ্নকর্তা চান আপনি ক্রেতার চাহিদা এবং প্রয়োজন যাতে বুঝতে পারেন, সে অনুযায়ী পণ্যের
মূল ফিচার বেছে নিতে পারেন এবং সে ফিচার এর
সুবিধাগুলো ক্রেতার কাছে তুলে ধরতে পারেন। পণ্য বিক্রির একটি প্রাথমিক উপায় হচ্ছে, পণ্যটি থেকে ক্রেতা কি কি সুবিধা
পাচ্ছেন তা ক্রেতার কাছে
বিক্রি করা, পণ্যটিতে সর্বমোট কি কি ফিচার
আছে তা তুলে ধরার
চেয়ে। সুতরাং কলমটির সব বৈশিষ্ট্য গড়গড়
করে বলতে যাবেন না। প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করুন,কলম কেনার ক্ষেত্রে তার কাছে কোন জিনিসটি গুরুত্বপূর্ন।তারপর উত্তর দিন।
৮। আপনার কি কোন প্রশ্ন আছে?
এ
প্রশ্নে অবশ্যই হাঁ বোধক উত্তর দেবেন। এটা আপনার সর্বশেষ সুযোগ, ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করার। ইন্টারভিউতে অন্তত কোম্পানি সম্পর্কে পাঁচটি প্রশ্ন প্রস্তুত করে আসবেন। যাতে বোঝা যায় আপনি কোম্পানি সম্পর্কে রিসার্চ করে এসেছেন। আপনার প্রশ্নগুলো এমন হতে পারে, “গত পাঁচ বছরে
এই কোম্পানির এই অর্জনগুলো রয়েছে,
সামনের পাঁচ বছরে আরো কি কি অর্জন
দেখতে চান?” অথবা “এই চাকরিতে ভালো
করতে কোন গুণাবলি প্রয়োজন। ?”
******************************************************************
ইন্টারভিউর প্রচলিত প্রশ্ন ও উত্তর
কেমন
হবে যদি ইন্টারভিউতে আপনাকে কি জিজ্ঞেস করা
হবে এবং তার উত্তর কি সেটা আপনার
আগে থেকেই জানা থাকে? এই লেখায় আপনাদের
জানানোর চেষ্টা করা হবে ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয় এমন কিছু
বহুল প্রচলিত প্রশ্ন ও তার উত্তর।
যদিও সব ইন্টারভিউতে মুখস্ত
করা একই উত্তর দেয়া মোটেও উচিৎ নয় তবুও হুট
করেই যাতে আপনি সম্পূর্ণ নতুন একটা প্রশ্নের সম্মুখীন না হন ও
ঘাবড়ে না যান সেজন্য
একটু আইডিয়া নিয়ে রাখলে ক্ষতি কি?
আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
এই
প্রশ্নটিকে শুনতে খুবই সহজ একটি প্রশ্ন মনে হলেও অনেকেই এর গ্রহণযোগ্য উত্তর
দিতে পারেন না। যা বলবেন, যা
বলবেন নাঃ নিজের সম্পর্কে বলতে গেলেই সবাই নিজের নাম ঠিকানা বলতে শুরু করেন। যেটা আসলে করা উচিৎ না। নিজের দক্ষতা ও অর্জন, ভাল
লাগা মন্দ লাগা নিয়ে কথা বলা উচিৎ। নিজের সম্পূর্ণ কর্মজীবনের বর্ণনা বা বায়োডাটা বলতে
শুরু করবেন না ভুলেও। আপনার
ক্যারিয়ার অথবা বায়োডাটা থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পয়েন্ট তুলে ধরুন যেটি এই চাকরির জন্য
আপনাকে যোগ্য বলে প্রমাণ করে। আপনার জীবনের ২-৩ টি
গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তুলে ধরুন যা আপনি ইন্টারভিউয়ারকে
জানাতে চান। তারপর এসব অর্জন কিভাবে আপনাকে এই চাকরির জন্য
যোগ্য বলে প্রমাণ করে সেটা তুলে ধরুন।
আমাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি কোথায় দেখেছেন?
এটি
খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন হলেও এর উত্তরের মাধ্যমে
আপনি আপনার আগ্রহের মাত্রাকে তুলে ধরবে পারবেন। আপনি চাকরির বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে যেভাবেই জেনে থাকুন সেটি সত্যি বলুন। বানিয়ে বানিয়ে বলার কোন দরকার নেই। তাতে হিতে বিপরীত কিছু হতেই পারে। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল আপনি কোথায়
থেকে সার্কুলার সম্পর্কে জেনেছেন সেটি বলার সাথে সাথেই আপনি সার্কুলার দেখা মাত্রই কেন আবেদন করেছেন সেটি তুলে ধরা। হাজার হাজার চাকরি থেকে আপনি এই চাকরিটি কেন
বেছে নিয়েছেন তা বর্ণনা করুন।
এখানেও কেন চাকরিটির জন্য আপনি নিজেকে যোগ্য মনে করেন সেটি ফুটিয়ে তুলুন।
আপনি আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কি জানেন?
যে
কেউ চাইলে কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে ২-৪ লাইন
মুখস্ত করে কোম্পানি সম্পর্কে বলে দিতে পারে। যে কারোর থেকে
নিজেকে আলাদা করার জন্য আপনাকে একটু ভিন্ন ভাবে আগাতে হবে। কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে পড়বেন ঠিকই তবে হুবাহু সেটাই বলবেন না। কোম্পানির লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে সেখান থেকে ২-৩ টা
কী পয়েন্ট ব্যবহার করুন ও মুখস্ত না
বলে নিজের মত করে বলুন।
এবং সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য উদ্দেশ্য কিভাবে মিলে যায় সেটা তুলে ধরুন।
আপনি এই চাকরিটি
কেন করতে চান?
কোম্পানি
সব সময়ই চাইবে এমন কাউকে নিয়োগ দিতে যে কাজটিকে ভালোবাসেন।
এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই খুব গুরুত্বের সাথে দিতে হবে এবং চমৎকার একটি উত্তর ভেবে রাখতে হবে। যদি এমন কোন উত্তর ভেবে না পান তবে
বুঝতে হবে এই চাকরির ব্যাপারে
আপনার আগ্রহ নেই, আপনার অন্য কোন চাকরিতে আবেদন করা উচিৎ। এখানেও আপনার কয়েকটা পয়েন্ট সনাক্ত করে রাখা উচিৎ কেন আপনি এই চাকরির জন্য
যোগ্য। যেমন যদি আপনি কাষ্টমার কেয়ার অফিসার পদে আবেদন করে থাকেন তবে আপনার বলা উচিৎ আমি সব সময়ই মানুষের
সাথে কথাবার্তা বলতে ও মানুষকে সমস্যা
সমাধানে সহায়তা করতে পছন্দ করি। আমার যোগাযোগের দক্ষতা চমৎকার। যদি আপনি কোন স্কুলে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করে থাকেন তবে আপনার বলা উচিৎঃ আমার মানুষকে বোঝানোর দক্ষতা খুবই ভাল এবং শিক্ষার প্রসারে সহায়তা করার আমার প্রবল ইচ্ছা, আপনাদের স্কুল এক্ষেত্রে আমাকে একটা সুন্দর সুযোগ করে দিতে পারবে বলে আমার ধারণা।
আপনাকে আমাদের
কেন নিয়োগ দেয়া উচিৎ?
এই
প্রশ্নটি শুনতে খুবই ভয়ংকর শোনায় কিন্তু যদি আপনাকে এই প্রশ্নটি করা
হয় আপনি অবশ্যই ভাগ্যবান। কোন কোম্পানির কাছে নিজেকে ও নিজের দক্ষতাকে
বিক্রি করার এমন চমৎকার সুযোগ সবাই পায় না। এখানে আপনাকে নিজের সম্পর্কে ৩ টি পয়েন্ট
ফুটিয়ে তুলতে হবেঃ প্রথমত আপনি শুধু কাজই করবেন না উল্লেখযোগ্য সফলতা
অর্জন করবেন; দ্বিতীয়ত আপনি যে কোন ধরণের
টিম ও পরিবেশে কাজ
করতে সর্বদা প্রস্তুত; এবং তৃতীয়ত অন্য যে কারো থেকে
আপনি এই কাজের জন্য
অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন।
আপনার পেশাদারী
বিশেষত্বের জায়গা কোনটি?
এই
প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই সততা অবলম্বন করতে হবে। ইন্টারভিউয়ার কি শুনতে চায়
সেটা না ভেবে আপনার
সত্যিকার বিশেষত্বটিই তুলে ধরুন। আপনার যেই দক্ষতা বা বিশেষত্বটি এই
চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় সেটা বর্ণনা করুন। সেটা হতে পারে মানুষকে প্ররোচিত করার দক্ষতা, মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার দক্ষতা। তার পর এই দক্ষতাকে
কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার পেশাগত জীবনে কি অর্জন করেছেন
সেটি তুলে ধরতে পারেন।
আপনার দুর্বলতার
জায়গা কোনটি?
এই
প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার আসলে জানতে চায় আপনি নিজের ব্যাপারে কতটা সচেতন ও সৎ। এই
প্রশ্নের উত্তরে মুখের উপর নিজের কোন দুর্বলতা বলে দেয়া ঠিক হবে না যেমনঃ আমি
সময়ের সীমাবদ্ধতায় কাজ করতে পারি না। আবার এটাও বলা উচিৎ হবে না যেঃ আমার
মধ্যে কোন দুর্বলতা নেই, আমি সব পারি। আপনার
এমন একটা দুর্বলতা ভেবে রাখুন যেটিতে আপনি কিছুটা দুর্বল হলেও প্রতিনিয়ত সেটাকে জয় করার জন্য
চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং আগের থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। যেমন ধরুন আগে আপনি মানুষের সামনে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না কিন্তু এই
দুর্বলতাকে কাটানোর জন্য এখন আপনি নিয়মিত কনফারেন্সে উপস্থিত থাকেন ও স্টেজে উঠে
কথা বলেন। আগের থেকে এখন আপনি অনেকটা দক্ষ হয়েছেন এ ব্যাপারে। তবে
অবশ্যই ভেবে রাখবেন কি ধরণের কনফারেন্সে
আপনি কথা বলছেন যাতে ফিরতি প্রশ্নে আপনি ধাক্কা না খান।
আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশাদারী অর্জন কি?
আপনি
যদি ফ্রেশার হন তবে এই
চাকরির সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন একাডেমিক বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে
অর্জনের বর্ণনা করতে পারেন তবে পেশাদারী বলতে আপনার চাকরি জীবনের অর্জনকেই বোঝায়। এ ক্ষেত্রে এটি
নিজেকে তুলে ধরার একটা চমৎকার সুযোগ। আপনার বর্তমান চাকরির অর্জন সুন্দর করে তুলে ধরতে পারলে আপনি নতুন চাকরি পাবার দিকে শতকরা ৮০% এগিয়ে থাকবেন। এই প্রশ্নের উত্তর
দিতে কখনই দ্বিধা করবেন না। একদমে আপনার বর্তমান ও পূর্ববর্তী চাকরি
সমূহের অর্জনগুলো তুলে ধরুন। এখানে নিজের সম্পর্কে সামান্য অতিরঞ্জনও হয়তো খুব বেশি দোষের কিছু না।
কর্মক্ষেত্রে
অনেক ধরণের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে বা ঝামেলা হতে
পারে। আপনার জীবনে এমন একটি চ্যালেঞ্জ ও সেটিকে আপনি
কিভাবে সামাল দিয়েছেন বলুন।
এই
প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার ইন্টারভিউয়ার আপনার সমস্যা সমাধান ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার
দক্ষতা যাচাই করতে চাচ্ছেন। অনেক চাকরি প্রার্থীকেই ইন্টারভিউর সময় দক্ষ ও সাবলীল মনে
হতে পারে কিন্তু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জে মুখোমুখি
হলে তাদের চেহারা সম্পূর্ণ উল্টে যেতে পারে। অনেকেরই চাপ নিয়ে কাজ করার দক্ষতা থাকে না। আপনি এ প্রশ্নের উত্তরে
আপনার কোন সহকর্মীর সাথে কাজ নিয়ে দ্বিমত ও কিভাবে তা
সমাধান করেছেন সেটি তুলে ধরতে পারনে অথবা বিশেষ কারণে অফিসের কাজের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেলে কিভাবে আপনি সেটি সামাল দেন তা বর্ণনা করতে
পারেন।
আজকে থেকে ৫ বছর পরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
ধরুন
আপনি একটি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছেন। এই প্রশ্নের উত্তরে
আপনি যদি বলেন ৫ বছর পরে
আপনি একটি ব্যাংকের মালিক হতে চান তাহলে এটি হবে কাল্পনিক উত্তর। আবার যদি আপনি বলেন আপনি ৫ বছর পর
ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হতে চান সেটি হবে নিজের পায়ে কুড়াল দেয়ার সামিল, ব্যাংকের চাকরির সাথে আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কোন মিল নেই। ইন্টারভিউয়ার বুঝেই নিবে আপনি এই চাকরি বেশিদিন
করবেন না। এই প্রশ্নের উত্তরে
আপনার স্বপ্ন ও এই চাকরির
বাস্তবতার মধ্যে অবশ্যই সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। ইন্টারভিউয়ারকে আশ্বস্ত করতে হবে যে এই চাকরি
করেই আপনি আপনার ভবিষ্যৎ সাজানোর চিন্তা করছেন। এখানে আপনি বলতে পারেন আপনি ৫ বছর পরে
একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হতে চান। যদি আপনি কোন মার্কেটিং সংক্রান্ত চাকরির ইন্টারভিউতে যান তবে আপনি বলতে পারেন যে আপনি ৫
বছর পরে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মার্কেটিং হেড হতে চান। উত্তরটি অবশ্যই ওই চাকরির সাথে
সংশ্লিষ্ট ও বাস্তবসম্মত হতে
হবে।
আপনার স্বপ্নের চাকরি কি?
এই
প্রশ্নটার সাথে আগের প্রশ্নের অনেকটা মিল আছে। ইন্টারভিউয়ার জানতে চেষ্টা করছেন যে আপনার জীবনের
লক্ষ্যের সাথে এই চাকরির কাজের
মিল আছে কিনা। আপনি যদি কল সেন্টারের জন্য
ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বলেন আপনি নায়ক/গায়ক বা খেলোয়াড় অথবা
রেডিও আরজে হতে চান ইন্টারভিউয়ার কোন ভাবেই আপনাকে সুযোগ দিবেন না। যদি আপনি আসলেই নায়ক/গায়ক বা খেলোয়াড় অথবা
রেডিও আরজে হতে চান তবে আপনার এই চাকরির জন্য
আবেদন করাই ঠিক হয়নি। এই প্রশ্নের উত্তরে
অবশ্যই আপনাকে চাকরির কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বপ্নের চাকরির কথা বলতে হবে।
আর কোন কোন কোম্পানিতে আপনি ইন্টারভিউ দিয়েছেন?
এই
প্রশ্নটি করার প্রধান কারণ হল ইন্টারভিউয়ার বোঝার
চেষ্টা করছেন যে আপনি এই
চাকরি সম্পর্কে কতটা সিরিয়াস। আপনি কি আবল তাবল
সব কোম্পানিতেই আবেদন করছেন নাকি কোন নির্দিষ্ট সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী। যেমন আপনি যদি টেক্সটাইল কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে থাকেন আপনার অবশ্যই বলা উচিৎ হবে না যে আপনি
কিছু হাসপাতালেও আবেদন করেছেন। এই প্রশ্নের সব
থেকে ফলপ্রসূ উত্তর হবে যদি আপনি আপনার ২-১ তা
দক্ষতা তুলে ধরেন এবং বলেনঃ আমার এই দক্ষতার সাথে
যেসব চাকরি মিলে যায় আমি সেসব চাকরিতে আবেদন করি। যেমন ধরুন একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বলতে পারেন যে আমি যেহেতু
আইটি স্পেশালিস্ট, স্বনামধন্য কোম্পানি হলে আমি আইটি সংক্রান্ত চাকরি গুলোতে আবেদন করি।
আপনি আপনার বর্তমান চাকরি কেন ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন?
এটি
একটি জটিল প্রশ্ন তবে আপনি এক রকম নিশ্চিত
থাকতে পারেন যে আপনি যদি
বর্তমানে কোথাও কর্মরত থাকেন তবে এই প্রশ্নের উত্তর
আপনাকে দিতেই হবে। এর উত্তরে পজিটিভ
কিছু বলার চেষ্টা করুন, আপনার বর্তমান কোম্পানি সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে আপনার তেমন কোন লাভ হবে না বরং উল্টো
কিছু হতে পারে। এমন ভাবে উত্তরটি সাজানোর চেষ্টা করুন যেন মনে হয় আপনি নতুন
কোন সুযোগের জন্য অধীর ভাবে অপেক্ষা করছেন এবং যে চাকরিটির জন্য
ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন সেই চাকরিটি আপনাকে আপনার আকাংখিত সুযোগটি দিতে পারে। সব চেয়ে ভাল
হয় যদি আপনি এই নতুন চাকরির
একটি নির্দিষ্ট সুযোগের কথা ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরতে পারেন যেটি আপনার আগের চাকরিতে নেই। যেমন ধরুন যদি চাকরিটিতে বিদেশে ট্রেইনিং এর মাধ্যমে পেশাদারী
দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ আছে যেটি আপনার বর্তমান চাকরিতে নেই। তাহলে আপনার বলা উচিৎ এই ট্রেইনিং এর
মাধ্যমে আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে চান।
আপনি আপনার নতুন চাকরি থেকে কি কি আশা করছেন?
এই
প্রশ্নের উত্তরে সৃজনশীলতা দেখানোর তেমন প্রয়োজন নেই। আবেদন করার আগে নিশ্চয়ই আপনি সার্কুলারটি ভাল করে পড়েছেন। এই চাকরি আপনাকে
যেসব জিনিস অফার করছে সেসব জিনিসই নিজের মত করে বর্ণনা
করুন।
আপনি কি ধরণের কাজের পরিবেশ পছন্দ করেন?
এই
প্রশ্নের উত্তরেও আপনাকে কিছুটা সৃজনশীলতা ত্যাগ করতে হবে। আপনি যদি এমন কোন পরিবেশের কথা বর্ণনা করেন যেটি ওই অফিসের মধ্যে
নেই তবে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন না। ওই অফিসের পরিবেশটা
বোঝার চেষ্টা করুন ও সেটাই বর্ণনা
করে বলুন। নেগেটিভ দিক গুলো বাদ দিয়ে বলার চেষ্টা করুন। যে কোন অফিসেরই
কিছু ভাল আর কিছু খারাপ
দিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
আপনি মাঝে অনেকদিন চাকরি করেননি, কেন?
আপনি
চাকরিতে যদি কোন কারণে অনিয়মিত হয়ে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই এই প্রশ্নের জন্য
প্রস্তুত থাকতে হবে। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোন
কারণ থাকলে সেটা সরাসরি বলে দেয়াটাই ভাল। অন্যথায় নিজের কোন উল্লেখযোগ্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড বা মানসিক উন্নয়নমূলক
কর্মকাণ্ডের কথা বলতে পারেন। কোন প্রকার প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণের জন্য চাকরি ছেড়ে থাকলে অবশ্যই তা বলতে পারেন।
শিক্ষকতা করে থাকলেও তা বলতে পারেন।
এবং সর্বশেষে আপনি যে নতুন করে
চাকরিতে ফেরার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত সেটা উল্লেখ করতে হবে।
আপনি কেন আপনার চাকরির সেক্টর পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন?
যে
চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন সেটি যদি আপনার বর্তমান চাকরির সেক্টরের সাথে না মিলে তবে
এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে অবশ্যই ভেবে রাখতে হবে। আপনি যদি আসলেই সেক্টর পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক হন তবে নিশ্চয়ই
তার পিছনে আপনার কাছে কোন যুক্তি থাকবে। সেই যুক্তিটি মনে মনে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন। তবে চমৎকার হবে যদি আপনি আপনার পুরনো সেক্টরের সাথে নতুন সেক্টরের কোন যোগসূত্র তুলে ধরতে পারেন। কিভাবে আপনি আপনার পুরনো সেক্টরের অভিজ্ঞতাকে নতুন সেক্টরে কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন তা বর্ণনা করুন।
নতুন সেক্টরে নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য নতুন করে আপনি কি কি দক্ষতা
অর্জন করেছেন সেটিও তুলে ধরুন।
জটিল পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করেন?
এই
প্রশ্নের উত্তরে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে যতটাই চাপ
থাকুক না কেন আপনি
কাজ শেষ না করে থামার
পাত্র নন। তারপর চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে কিভাবে আপনি কাজ গুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেন এবং গুরুত্বের ভিত্তিতে সময়সীমা মাথায় রেখে একে একে কাজ গুলো শেষ করেন তা বর্ণনা করুন।
আপনি কেমন বেতন প্রত্যাশা করেন?
এটি
ইন্টারভিউর একটি অবধারিত প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর
দিতে হলে আপনাকে অবশ্যই ওই চাকরির বেতন
সম্পর্কে ভাল ধারণা নিতে হবে। অনেকের ধারণা কম টাকা চাইলেই
চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এটি একটি ভুল ধারণা, প্রচলিত বেতনের থেকে কম বেতন প্রত্যাশা
করলে ইন্টারভিউয়ার ভেবে নিবে চাকরিটি সম্পর্কে আপনার ধারণাই নেই। বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা ওই সেক্টরে কর্মরত
বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের
কাছে থেকে বেতন সম্পর্কে ধারণা অর্জন করুন। ধারণা নেয়ার পরে নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে
প্রচলিত সর্বোচ্চ বেতনটি উল্লেখ করুন। এবং ইন্টারভিউয়ার কে বুঝিয়ে দিন
আপনি আপনার যোগ্যতার মূল্য বোঝেন তবে যেহেতু চাকরিটি আপনি করতে ইচ্ছুক তাই বেতন কিছুটা কম-বেশি হলে
সেটা নিয়ে আলোচনায় আপনি আগ্রহী।
কাজের বাইরে আপনি কি করতে পছন্দ করেন?
ইন্টারভিউয়ার
অনেক সময় ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারেন। সাধারনত এ ধরণের প্রশ্নের
মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেন। আপনি আপনার আশেপাশের পরিবেশ ও মানুষের সাথে
নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা সেটা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিত্বের উপর। এই প্রশ্নের উত্তরে
“গান শুনি, বাগান করি, সিনেমা দেখি” এসব গতানুগতিক উত্তর দিতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি অবসরে ঠিক যা করেন সেটি
যদি সাবলীল হয় তবে তাই
বর্ণনা করুন। আপনার অবসর কর্মকাণ্ড আপনার পেশার সাথে সম্পর্কযুক্ত হলে ভাল, না হলেও কোন
ক্ষতি নেই।
আমাদের কোম্পানি কি করলে আরো ভাল করবে বলে আপনার মনে হয়?
এই
ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া খুব স্বাভাবিক। এটিও আপনার সৃজনশীলতা দেখানোর জন্য ভাল একটি সুযোগ। এই প্রশ্নের উত্তরে
আপনি বুঝিয়ে দিতে পারেন যে আপনি শুধু
কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে এসেছেন তাই নয়, আপনার কাছে নতুন নতুন আইডিয়াও রয়েছে। এই প্রশ্নের জবাব
দিতে আপনাকে কোম্পানির জন্য ৪ বছরের পরিকল্পনা
তৈরি করতে হবে না। কি করলে কোম্পানি
আরো এগিয়ে যাবে, কি করলে গ্রাহকসেবার
মান উন্নত হবে, কি কি নতুন
সুবিধা যোগ করা যেতে পারে এমন ছোট ছোট আইডিয়া ভেবে রাখুন। এতে করে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে নিয়োগ করলে কিভাবে লাভবান হতে পারে তার একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।
আপনার কি আমাদের ব্যাপারে কিছু জানার আছে?
ইন্টারভিউ
মানে এই না যে
শুধুমাত্র আপনাকে প্রশ্ন করা হবে এবং আপনি উত্তর দিয়ে যাবেন। আপনারও অধিকার রয়েছে আপনার ভবিষ্যৎ নিয়োগদাতা কোম্পানি সম্পর্কে জানার। আপনি কোথায় কাজ করতে যাচ্ছেন সেই পদ, কোম্পানি, ডিপার্টমেন্ট ও টিম সম্পর্কে
জেনে নেয়াটা খুবই জরুরী। চাকরিটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা সেটা অবশ্যই বিচার করে নিতে হবে। কোম্পানির ভবিষ্যৎ লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। দেখে নিতে পারেন আপনার লক্ষ্যের সাথে আপনার নিয়োগদাতার লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। আপনার যে কোন যৌক্তিক
প্রশ্ন আপনি করতে পারেন এই সুযোগে।